ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তীব্র হামলায় গাজা শহরের সব ব্যবস্থা অচল 

  • আপডেট সময় : ০৭:৩৩:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে

ফিলিস্তিনের গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের নতুন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে নানামুখী পদক্ষেপের মধ্যেই ইসরায়েল বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। গাজা শহরে প্রয়োজনীয় প্রতিটি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাসপাতাল থেকে শুরু করে পানির অবকাঠামো, শিক্ষা এবং আশ্রয় কোনো কিছুই আর স্বাভাবিক নেই। শ্রেণিকক্ষ বা খেলার মাঠে থাকার পরিবর্তে শিশুরা বিমান হামলা থেকে পালিয়ে ফিরছে। তারা অনাহারে মারা যাচ্ছে। 

এরই মধ্যে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে গতকাল সোমবার বৈঠক করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর আগে রোববার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, গাজা শান্তি চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তাঁর দাবি, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর শান্তির পথ খুলে যাবে। অক্সিওস নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা জানান। 

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা শহরে ইসরায়েলি আক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে গত পাঁচ দিনে উত্তর থেকে দক্ষিণ গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে। গত আগস্টের মাঝামাঝি থেকে গাজা শহরের প্রায় চার লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি জানিয়েছেন, সংস্থাটির কাছে যে পরিমাণ খাদ্য আছে তা আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সংকট কাটাতে তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায়  ৫০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। আহত হয়েছে ১৮৪ জন। নিহতের মধ্যে পাঁচজন ত্রাণপ্রার্থী রয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধে কমপক্ষে ৬৬ হাজার ৫৫ জন নিহত এবং এক লাখ ৬৮ হাজার ৩৪৬ জন আহত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪০০ জনেরও বেশি শিশু অনাহারে মারা গেছে। গত দুদিন ধরে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশু এক দিনেরও বেশি সময় ধরে খাবার ছাড়াই ছিল বলে এক জরিপে প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। 

রাফার কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে চারজন সাহায্যপ্রার্থী নিহত হয়েছে। নাসের হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাফা শহরের উত্তরে একটি বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনী ওই চারজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় সাহায্যপ্রার্থী হিসেবে মোট দুই হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ১৮ হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছেন। হামলার কারণে গাজার হাসপাতালের ব্লাডব্যাংক ‘সম্পূর্ণ বন্ধ’ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

এদিকে নিত্যনৈমিত্তিক বোমা হামলা গাজার বাসিন্দাদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। মানুষ ক্রমাগত বোমাবর্ষণে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। স্থানান্তরের উচ্চ খরচের কারণে এবং দক্ষিণ গাজায় আশ্রয়ের জায়গা না থাকায় তারা গাজা শহর ছাড়তে চাইছে না, যদিও শহরের কোথাও কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

তীব্র হামলায় গাজা শহরের সব ব্যবস্থা অচল 

আপডেট সময় : ০৭:৩৩:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের নতুন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে নানামুখী পদক্ষেপের মধ্যেই ইসরায়েল বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। গাজা শহরে প্রয়োজনীয় প্রতিটি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাসপাতাল থেকে শুরু করে পানির অবকাঠামো, শিক্ষা এবং আশ্রয় কোনো কিছুই আর স্বাভাবিক নেই। শ্রেণিকক্ষ বা খেলার মাঠে থাকার পরিবর্তে শিশুরা বিমান হামলা থেকে পালিয়ে ফিরছে। তারা অনাহারে মারা যাচ্ছে। 

এরই মধ্যে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে গতকাল সোমবার বৈঠক করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর আগে রোববার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, গাজা শান্তি চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তাঁর দাবি, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর শান্তির পথ খুলে যাবে। অক্সিওস নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা জানান। 

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা শহরে ইসরায়েলি আক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে গত পাঁচ দিনে উত্তর থেকে দক্ষিণ গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে। গত আগস্টের মাঝামাঝি থেকে গাজা শহরের প্রায় চার লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি জানিয়েছেন, সংস্থাটির কাছে যে পরিমাণ খাদ্য আছে তা আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সংকট কাটাতে তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায়  ৫০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। আহত হয়েছে ১৮৪ জন। নিহতের মধ্যে পাঁচজন ত্রাণপ্রার্থী রয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধে কমপক্ষে ৬৬ হাজার ৫৫ জন নিহত এবং এক লাখ ৬৮ হাজার ৩৪৬ জন আহত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪০০ জনেরও বেশি শিশু অনাহারে মারা গেছে। গত দুদিন ধরে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশু এক দিনেরও বেশি সময় ধরে খাবার ছাড়াই ছিল বলে এক জরিপে প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। 

রাফার কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে চারজন সাহায্যপ্রার্থী নিহত হয়েছে। নাসের হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাফা শহরের উত্তরে একটি বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনী ওই চারজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় সাহায্যপ্রার্থী হিসেবে মোট দুই হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ১৮ হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছেন। হামলার কারণে গাজার হাসপাতালের ব্লাডব্যাংক ‘সম্পূর্ণ বন্ধ’ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

এদিকে নিত্যনৈমিত্তিক বোমা হামলা গাজার বাসিন্দাদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। মানুষ ক্রমাগত বোমাবর্ষণে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। স্থানান্তরের উচ্চ খরচের কারণে এবং দক্ষিণ গাজায় আশ্রয়ের জায়গা না থাকায় তারা গাজা শহর ছাড়তে চাইছে না, যদিও শহরের কোথাও কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।